শান্তিতে নোবেল পাওয়া উচিত এরদোগান ও শেখ হাসিনার Sino-Bangla Sino-Bangla News Publish: 7:32 AM, November 21, 2019 অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েপ এরদোগান শরনার্থীদের আশ্রয় দিয়ে বিশ্বে মানবতার ইতিহাস তৈরি করেছেন এবং আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বাংলাদেশের মতো জনবহুল ঘনবসতিপূর্ণ দেশে মানবিক দিক বিবেচনা করে রোহিঙ্গাদেরকে যেভাবে আশ্রয় দিয়েছেন তাতে দু’জনেরই শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাওযা উচিৎ। আশা করা যায় সারা বিশ্ব এ বিষয়ে একমত পোষণ করবেন। বাণিজ্য ও বিনিয়োগসহ ১৫টি লক্ষ্যকে সামনে রেখে তুরস্কের আঙ্কারায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের নেতৃত্বে শুরু হয়েছে বাংলাদেশ-তুরস্ক যৌথ অর্থনৈতিক কমিশন সভা। সভায় কথা প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী এ কথা বলেন। যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনে তুরস্কের সঙ্গে এটা পঞ্চম সভা। তিন দিনের বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বাণিজ্য-বিণিয়োগ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, আইসিটি, শিপ বিল্ডিং, শিল্প, কর্মসংস্থান, নৌ-পরিবহন, কৃষি, শিক্ষা, নগরায়ন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, পর্যটন ও বিমান পরিবহন, জ্বালানি-বিদ্যুৎ, সংস্কৃতি-ট্যুরিজম, ডেভলপমেন্ট অ্যাসিসট্যান্স, মানবসম্পদ উন্নয়ন, পাট-টেক্সটাইলসহ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগের জন্য অনুরোধ কর হয়েছে। এছাড়া এতদিন ধরে চলে আসা দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক পর্যালোচনার পাশাপাশি নতুন করে আর কি কি খাতে অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করা যায় সেসব বিষয় নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে। পাশাপাশি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল গতকাল তুরস্কের গ্রান্ড ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির স্পিকার মুস্তফা সেন্তোপের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাৎকালে অর্থমন্ত্রী বলেন, তুরস্ক একটি অন্যতম অসাম্প্রদায়িক দেশ। যে দুটি কারণে তুরস্ক সারা বিশ্বে অত্যধিক সমাদৃত হয় তার একটা হলো অসাম্প্রদায়িকতা আর দ্বিতীয়টি হলো জঙ্গিবাদের কারণে বিশ্বের কোথাও কোনো মানুষের যেন ক্ষতি না হয় সে বিষয়ে জোরালো পদক্ষেপ। বাংলাদেশের সাথে তুরস্কের এই নীতিতে অত্যন্ত সামাঞ্জস্য রয়েছে কেননা বাংলাদেশ ইতোমধ্যে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ ও তুরস্কের মধ্যে স্বাধীনতা অর্জনে বিসর্জন ও ত্যাগ স্বীকারসহ অনেক ক্ষেত্রে অসাধারণ সামাঞ্জস্য রয়েছে। অর্থমন্ত্রী বাংলাদেশের সার্বিক অগ্রগতি তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থান দেশটিকে আঞ্চলিক যোগাযোগ, বিদেশি বিনিয়োগ এবং গ্লোবাল আউট সোর্সিংয়ের একটি কেন্দ্রে পরিণত করেছে। দেশে একশটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি খাতে বিনিয়োগকে টেকসই করার জন্যই সরকার এই শিল্পাঞ্চলগুলো গড়ে তুলেছে। বিশ্বব্যাপী চলমান অর্থনৈতিক মন্দা সত্ত্বেও বাংলাদেশ গত ১০ বছরে ৭ শতাংশের ওপরে প্রবৃদ্ধি অর্জনে সমর্থ হয়েছে এবং এ বছর ৮ দশমিক ১৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। আমরা আগামী বছর ৮ দশমিক ২৫ শতাংশ থেকে ৮ দশমিক ৩০ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের প্রত্যাশা করছি, যা ২০২৪ সাল নাগাদ দাঁড়াবে ১০ শতাংশ এবং সেটা অব্যাহত থাকবে। আমাদের রয়েছে প্রতিযোগিতামূলক বেতন-ভাতায় সহজে প্রশিক্ষণযোগ্য নিবেদিত প্রাণ জনশক্তি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান স্থাপনে স্বল্প ব্যয় এবং আমাদের বৃহৎ শুল্কমুক্ত কোটামুক্ত বাজারে প্রবেশ সুবিধা। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সব চেয়ে ভালো বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ এবং অত্যন্ত আকর্ষণীয় প্রণোদনার সুযোগ গ্রহণের মাধ্যমে অধিক হারে মুনাফার সুযোগ রয়েছে। ইলেকট্রনিক্স, ওষুধ, গ্যাসসহ বেশ কিছু খাতে তুরস্কের বিনিয়োগের ইতিবাচক সাড়াকে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সাধুবাদ জানান এবং আরো বেশি বেশি বিনিয়োগের জন্য আহ্বান জানান। তিনি তুরস্ককে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ করার জন্য আহ্বান করে বলেন, তুরস্ক বর্তমানে অর্থনৈতিকভাবে অনেক শক্তিশালী। তাই তুরস্ক যদি বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ করার জন্য জায়গা নিতে চায় তাহলে সরকার তাদেরকে সর্বোতভাবে সহায়তা করবে। তুরস্কের স্পিকার মুস্তফা সেন্তোপ বলেন, বাংলাদেশের সাথে তুরস্কের সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দূরত্ব অনেক হলেও দুই দেশের মধ্যে ধর্ম, সংস্কৃতিসহ রয়েছে অনেক ক্ষেত্রে সামঞ্জস্য। আমি আপনার এই সফরে অত্যন্ত আনন্দিত এবং আশা করছি অত্যন্ত ফলপ্রসূ হবে। রোহিঙ্গাদেরকে আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ সারা বিশ্বে উদারতার এক মহান দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। আরাকানের এই মুসলিমদের উপর যে অবিচার করা হয়েছে সেটি অত্যন্ত ন্যাক্করজনক। তুরস্ক এই সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশের পাশে রয়েছে। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, তুরস্কও চার মিলিয়ন শরনার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে, আর বাংলাদেশ এক মিলিয়ন রোহিঙ্গা শরনার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে। পৃথিববীর অন্যতম প্রধান জনবসতি ঘনত্বপূর্ণ একটি ছোট দেশ বাংলাদেশ। বাংলাদেশ হচ্ছেÑ একটি সামাজিক বন্ধন ও সম্প্রীতির দেশ এবং এটি আমাদের সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্যও একটি হাতিয়ার। এখানে একে অপরের কষ্টে ব্যথিত হয়, যে কোনো ধরনের আপদ বিপদে একে অপরকে যেভাবে সাহয্য সহযোগিতা করতে এ গিয়ে আসে তা যে কোনো দেশের ইতিহাসে বিরল। কিন্তু রোহিঙ্গা সমস্যাটির কারণে এটা এখন অনেকটাই হুমকির মুখে। আর তাই বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে প্রত্যাবসনের কোনো বিকল্প নেই। যে কোনো উপায়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে রোহিঙ্গা নাগরিকদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে তুরস্ককে সহায়তা করার অনুরোধ করেন। প্রাণভয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা নাগরিকদের বাংলাদেশে মানবিক কারণে আশ্রয় দেয়া হলেও এখন তার উচ্চমূল্য দিতে হচ্ছে। কক্সবাজারসহ ওই এলাকার পুরো পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। এতে আমাদের সামাজিকভাবে ও জলবায়ুগত চ্যালেঞ্জ বাড়ছে। আমাদের সামাজিক বন্ধনসহ যে সব ক্ষতি হচ্ছে তা ডলার বা টাকার অংকে পরিমাপ করা সম্ভব নয়। তাই রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে হবে, এটাই আমাদের প্রধান চাওয়া। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল তুরস্কের স্পিকারকে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে সালাম ও শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন। তিনি তাকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ করেন এবং তুরস্কের স্পিকার বাংলাদেশ সফরের জন্য সম্মতি জ্ঞাপন করেন। SHARES Home Subject: